গর্ভাবস্থার ডায়েট কেন জরুরী এবং কিভাবে ডায়েট করলে মা ও শিশুর হেলথ ভালো থাকবে।

January 28, 2024


পুষ্টিকর পথচলা:

গর্ভাবস্থার ডায়েটের তাৎপর্য

গর্ভাবস্থায়  একটি অবিশ্বাস্য যাত্রা চিহ্নিত করে যা প্রত্যাশা, আনন্দ এবং অগণিত পরিবর্তনে ভরা। পরিবর্তনগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি হল একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য বজায় রাখা। গর্ভাবস্থায় গ্রহনকৃত খাদ্যগুলি থেকে প্রাপ্ত পুষ্টি উপাদান মায়ের স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখার সাথে সাথে শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

আসুন, গর্ভাবস্থার ডায়েটের প্রয়োজনীয়তা এবং এর তাৎপর্য সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। 

বেড়ে উঠতে সাহায্য করে

একটি সুষম খাদ্যতালিকা গর্ভাবস্থায়  শিশুর বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যোগান দিয়ে থাকে। যেমন: প্রোটিন শিশুর অঙ্গ প্রতঙ্গ গঠনে সাহায্য করে, ক্যালসিয়াম হাড় দাঁতের বিকাশে সাহায্য করে। আয়রন লোহিত রক্তকণিকা গঠনে সাহায্য করে যেটা মা শিশু উভয়ের অক্সিজেন পরিবহনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলিক অ্যাসিড, বি-ভিটামিন শিশুর মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের সাথে সম্পর্কিত জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে কাজ করে।

দুজনের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার নির্বাচন

পুষ্টিগুন সমৃদ্ধি খাবার নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যে বিভিন্ন রঙ্গিন ফল এবং শাকসবজি অন্তর্ভুক্ত করা যা  ভিটামিন এবং খনিজলবনগুলো সরবরাহ করে। গোটা শস্য আশঁ শক্তি সরবরাহ করে;  মাছ, মাংস এবং মটরশুটির মতো চর্বিহীন প্রোটিনগুলি প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড সরবরাহ করে। দুগ্ধজাত খাদ্য পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ নিশ্চিত করে। বাদাম, বীজ এবং ডালে পাওয়া স্বাস্থ্যকর চর্বি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করে। 

হাইড্রেশন এবং পরিপূরক

গর্ভাবস্থায় হাইড্রেটেড থাকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পানি শিশুর অ্যামনিওটিক তরলের ভারসাম্য রক্ষায় প্ল্যাসেন্টা গঠনে সাহায্য করে এবং মায়ের শরীরে রক্তের পরিমান বাড়ায়। উপরন্তু, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের দ্বারা নির্ধারিত প্রসবপূর্ব সম্পূরক পুষ্টির অভাবগুলো পূরণ করে যাতে অত্যাবশ্যক পুষ্টির পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্রহণ নিশ্চিত করা যায়।

প্রহণীয় পরিত্যাজ্য 

গর্ভাবস্থায় কিছু খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। উচ্চ-পারদযুক্ত মাছ, পাস্তুরিত ছাড়া দুগ্ধজাত খাবার, কাঁচা বা কম রান্না করা মাংস এবং অতিরিক্ত ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল শিশুর স্বাস্থ্যের সম্ভাব্য ঝুঁকির কারণে সীমিত বা সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া উচিত। এছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে আনারস, কাঁচা পেঁপে খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। 

স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের পরামর্শ গ্রহণ 

প্রতিটি গর্ভাবস্থার যাত্রা অনন্য, এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সাথে নিয়মিত পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ; তারা মা এবং শিশু উভয়ের জন্য পুষ্টির সঠিক ভারসাম্য নিশ্চিত করে, স্বতন্ত্র স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট তালিকা দিতে পারেন।

খাদ্যতালিকাগত নির্দেশিকা 

বারবার খাবার গ্রহন করা উচিত। অভুক্ত থাকা বা কোনো বেলার খাবার মিস করা এড়িয়ে চলুন। 

গর্ভাবস্থায় একটি সাধারণ সমস্যা কোষ্ঠকাঠিন্য যা রোধ করতে খাদ্যতালিকায় আশঁ যুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় - বার ফল শাকসবজি রাখা প্রয়োজন।

অস্টিওম্যালাসিয়া প্রতিরোধের জন্য ডায়েট ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়া উচিত। ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টও যোগ করা যেতে পারে।

রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করতে এবং ভ্রূণের শরীরে আয়রন সঞ্চয় করতে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত। আয়রন ট্যাবলেটও গ্রহণ করা যেতে পারে। 

খাদ্যে পরিমিত পরিমাণে সোডিয়াম থাকা উচিত। উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে সোডিয়াম নিয়ন্ত্রন আবশ্যক। 

সবুজ শাক-সবজিতে ক্যালসিয়াম এবং আয়রনের মতো খনিজ পদার্থ নিশ্চিত করে। 

আন্ত্রিক কার্যক্রম নিয়মিত রাখার জন্য প্রচুর পানি পান করতে হবে। 

চর্বিযুক্ত খাবার, ভাজা খাবার, অত্যাধিক মশলা, তীব্র স্বাদযুক্ত শাকসবজি বমি বমি ভাব এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় সীমাবদ্ধ হতে পারে। 

পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি গ্রহণ করা উচিত যাতে গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত চর্বি জমা হয় যা পরবর্তীতে  দুগ্ধদানকালীন সময়ের জন্য প্রয়োজন।

উপসংহারঃ

গর্ভাবস্থার স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস একটি  সমৃদ্ধ যাত্রার ভিত্তি স্থাপন করে। এটি মায়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করার সাথে সাথে শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশকে সহায়তা করে। পুষ্টিকর খাবার বাছাই করা, হাইড্রেটেড থাকা এবং পেশাদার দিকনির্দেশনা পালন করা হল স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার লালনপালনের জন্য মৌলিক পদক্ষেপ। মনে রাখবেন, এটা শুধু দুজনের জন্য খাওয়া নয়; এটি দুজনের জন্য আবশ্যক; মা এবং শিশু উভয়ের জন্য একটি সুন্দর এবং স্বাস্থ্যকর জীবন শুরু নিশ্চিত করবে।

Writer:

Rashida Afroz

Fitness Nutritionist

 

Back to top